সোমবার, ৬ জুন, ২০১১

গল্প


বন্ধু তুই ভীষন ভাল

মানুষের সাথে জড়িয়ে থাকা সম্পর্কগুলো অদ্ভুত।সম্পর্কগুলো নিজ কাঠামোর শক্তি বলে ব্যাক্তিকে পরিচালিত করে। পরিচালিত করার ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষমতাধর সম্পর্ক হল বন্ধুত্ব।মানুষের আত্নিক চাহিদার সবটুকু পূরণ করে বন্ধু্।এটা বিরতিহীন সম্পর্ক।ছোট বেলায় বেড়ে উঠার সঙ্গি থেকে শুরু করে অফিসের কলিগ যে কেউ বন্ধু হয়ে যেতে পারে।বন্ধুত্বের কোন সঠিক মাপকাঠি নেই।

ভার্সিটি লাইফে আপনারা -১০ জন একসাথে চলা ফেরা কনতেন।৮-১০ জনই আপনার বন্ধু।তবে এসব দলে দেখা যায় দুতিন জনের উপদল আছে।আপনার ৫০ জন ভাল বন্ধু থাকতে পারে।তবে দুএক জন থাকে বিশেষ বন্ধু।আমি আসলে সেই বন্ধুটির কথাই বলছি।এই রকম বন্ধু দেখবেন আপনার প্রতিটি পদক্ষেপে জড়িয়ে আছে।১০ জনকে যে কথা বোঝাতে পারছেন না, নিমেষেই সে বুঝে ফেলবে।আমি জানি পড়ার ঠিক এই মূহুর্তে আপনার প্রিয় সে বন্ধুটির চেহরা চোখে ভাসছে।আসলেই এটাই বন্ধুত্ব।সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল এই সম্পর্কটি প্রচার হয়না।আপনি আপনার প্রেমিক/প্রেমিকাকে সকাল বিকাল দুবেলা ভালবাসার কথা জানিয়ে দিন, অথচ খেয়াল করে দেখেছেন প্রিয় বন্ধুটিকে কখনো বলা হয়না।আমারতো আমার সেরা বন্ধুটির সামনে বলতেই লজ্জা করে যে সে আমার সেরা বন্ধু।তাকে কখনই জানাতে ইচ্ছা হয়না আমি তাকে কতটা ভালবাসি।সে বুঝে, আমিও বুঝি।কারন সব অনুভতির গন্তব্যস্হলতো সে।আপনাদের কি এমন হয়?

পরিবারে কোন সমস্যা হলে অকপটে বন্ধুর কাছে বলা যায়।কিন্তু বন্ধুর সাথে সমস্যা হলে সেটা কিন্তু পরিবারে বেশীরভাগ সময় বলা হয় না।আমি কিন্তু বলছিনা পরিবারের চেয়ে বন্ধুর গভীরতা বেশী।এটা্ই আসলে বন্ধুত্বের ধরন।মানুষের দুঃখ পাএয়ার মৌলিক কিছ কারন রয়েছে।যা প্রায় সব মানুষের জীবনে কম বেশী ঘটে। পরিবার থেকে পাওয়া দুঃখ, ভালবাসার মানুষের কাছ থেকে পাওয়া দুঃখ, অর্থনৈতিক দুঃথ।এসব দুঃখ অকপটে বন্ধুর কাছে বলে ফেলা যায়।কিন্তু সেই ব্যাক্তি পৃথিবীর সবচেয়ে দুখী যে প্রিয় বন্ধুর কাছ থেকে দুঃখ পেয়েছে।তার যে বলা কেউ রইলোনা।

অনেককেই বলতে শুনি নারীর কারনে নাকি বন্ধুত্ব নষ্ট হয়? কি আজব কথা? যে বন্ধুত্ব নারীর কারনে নষ্ট হয় সে বন্ধুত্ব হল চরিত্রহীন কোন ব্যাক্তির দেহলোভী প্রেমের মত। নিজেরা যদি নিজেদের মধ্যে পরিস্কার থাকা যায় তবে স্বয়ং ঐশ্বরিয়ারও সাধ্য নাই আপনাদের বন্ধুত্ব নষ্ট করে।

এবার আসুন আপনাদের বন্ধুত্বে চিরায়িত কিছু সাধারন রুপ দেখাই।যা আমাদের দেশে সব শ্রেণীর বন্ধুদের মাঝে ঘটে থাকে।দ্বি-মত পোষন করলে বলবেন।

. যত বড়ই হোন না কেন খাওয়ার পর বিল নিয়ে সমস্যা হবে। ছাত্র অবস্থায় একজনের বিল আরেক জনের উপর চাপিয়ে দেয়া চেষ্টা চলে।আজকে তুই দে, না তুই দে। আর আয় রোজগার করার পর নিজে বিল দেয়ার আপ্রান চেষ্টা চলে।আজ আমি দিই, না না আমি দিই। (বন্ধু যদি কৃপন হয় তবে ছাত্র অবস্হার দ্রষ্টাব্য)

. ভাড়া নিয়ে গ্যান্জাম হবেই।তুই মোটা তুই জায়গা বেশী নিছিস,তাই ভাড়া তুই দিবি।অথবা রিকশা তুই ডাকছিস,তুই দে।আমার এক বন্ধু ছিল বাসে উঠলে ভাড়া দেয়ার ভয়ে ঘুমিয়ে যেত্ ফায়ার সার্ভিস দিয়েও তাকে তখন ঘুম থেকে তোলা যেতনা।

. আরেকটা ব্যাপার হল খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি।নিজের প্লেটে খাবার মজুদ থাকা সত্ত্বেও বন্ধুর প্লেট থেকে হাত টেনে খেতে যে কি মজা।আসলে বন্ধুর প্লেটেরে খাবারের স্বাদ বেশী।বন্ধুর হাত থেকে খাবার বাঁচাতে খাবারে থুতু দেয়াও মনে হয় অনেক ঘটে।

.এটা অবশ্যই কৈশোরের বন্ধুত্বের বৈশিষ্ট। ওই তোর কাছে আমি ৭টাকা ৪৩ পয়সা পাই, তোর কাছে পাই সাড়ে ১১টাকা।

. বন্ধুরা মিলে একসাথে মহা ভোজন দেয়া অতি আনন্দের ব্যাপার।তুই ১৮টা পরোটা খাইছ ,না তুইতো খাস নাই। এই কথাগুলো সব বন্ধুদের দলে হরহামেশাই শোনা যায়।

. প্রায় প্রতিটি বন্ধুদের দলে বলতে শোনা যায় আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের মত সার্কেল কমই আছে।

. দোস্ত কিছু টাকা ধার দে তো,পরের সপ্তাহে পেয়ে যাবি।অবস্থার পরিবর্তনের সাথে বলার ধরন পরিবর্তন হয় কেবল।

আজ আর ঠিক মনে আসছে না।আপনাদের আসলে জানাবেন।আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থাবেদধে আমরা আমাদের মা-বাবাকে বিভিন্ন নামে ডাকি।মা,আম্মু.মাম্মি……আব্বা,আব্বু,পাপা,বাজান……..কিন্তু সব জায়গায় প্রিয় বন্ধূর সম্বোধন একতুইকত ভাল লাগে তুই শুনতে। অথচ অপরিচিত কেউ বললে? সে জন্য সে বন্ধু। বন্ধুর সাথে দেখা হলে গায়ে দুএকটা লাগিয়ে, মুখে অশ্লীল গালি দিয়ে তারপর আমরা কথা আরম্ভ করি।অথচ কত মধুর সে সম্পর্ক।এটাই শান্তি,এটাই বন্ধুত্ব। জয় হোক বন্ধুত্বের ।
লিমন, দিনাজপুর থেকে :

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন